বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: রবিবার রাতে পশ্চিমবাংলার মালদায় ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। গুলিবিদ্ধ হলেন স্বয়ং এক প্রার্থী। রবিবার রাতে বিজেপি প্রার্থীকে কয়েকজন দুষ্কৃতী গুলি করে। বিজেপির দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই গুলি চালিয়েছে। প্রতিবাদে সোমবার গোটা মালদা জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে তারা। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। উল্লেখ্য, বাংলায় পাঁচ দফা ভোট হয়ে গেলেও মালদার ভোট বাকি রয়েছে। ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফার যে নির্বাচন হবে, সেদিন মালদার এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা। ফলে মালদার ভোট পর্ব অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলের।
কোভিড পরিস্থিতির কথা ভেবে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের সময়সীমা কমিয়ে দিয়েছে। সন্ধে সাতটা পর্যন্ত এখন প্রচার করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলি। রবিবার মালদার ঝন্টুর মোড় এলাকায় প্রচারের কাজ শেষ করে মালদার বিজেপি প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা কার্যালয়ে ফিরে আসেন। সেখানে টিফিন খেয়ে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য বের হন। কিছুটা পথ হেঁটে গিয়ে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে রাস্তায় কথা বলছিলেন। তখনই কয়েকজন দুষ্কৃতী এসে হাজির হয় সেখানে। কাছ থেকেই গুলি করে গোপালবাবুকে। গুলি লাগে তাঁর গলায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দুষ্কৃতীরা তখন পালিয়ে যায়। গোপালবাবুর সঙ্গে যাঁরা কথা বলছিলেন, তাঁরাই তড়িঘড়ি তাঁকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক সুশ্রূষা করে মালদা মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অপারেশন করে গোপালবাবুর গলা থেকে গুলি বের করা হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা রীতিমতো আশঙ্কাজনক।
ঘটনার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মালদার বিজেপি নেতা–কর্মীরা। ঘটনার জন্য তাঁরা সরাসরি আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের দিকে। প্রায় সব নেতাই বলেছেন, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই গোপালবাবুকে গুলি করেছে। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই তৃণমূল এখন খুন–জখমের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। এখন ব্যক্তিহত্যার মাধ্যমে বিরোধী দলগুলিকে ভয় দেখাতে চাইছে। মালদার জেলা বিজেপি সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘এই রাজ্যে কথায় কথায় যে গুলি চলে, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেল। এখন এই রাজ্য দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।’ অধিকাংশ বিজেপি নেতাই পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসন এখনও শাসক দলকে যে মদত দিয়ে চলেছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। ঘটনার জন্য বিজেপির তরফে নিশানা করা হয়েছে স্বয়ং তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। দলের তরফে বলা হয়েছে, মমতা বলেছিলেন, ‘খেলা হবে।’ এই ‘খেলা’র কথাই কি বলতে চেয়েছিলেন তিনি?
বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরি বলেছেন, ‘এই ঘটনায় স্পষ্ট বাংলায় আইন–শৃঙ্খলা বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারাদিন ধরে শুধুই বড় বড় কথা বলে যান। তাঁর সব কথাই যে আসলে ভাঁওতা, এই ঘটনায় তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ভরসন্ধ্যায় একজন বিরোধী প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনা, কোনও সভ্য সমাজে ভাবা যায়!’ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মালদারই ইংরেজবাজারের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি। তিনি বলেছেন, ‘তৃণমূল হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। সব সময় সহাবস্থানের রাজনীতিই করে এসেছে তৃণমূল। এই অভিযোগ করে বিজেপি নেতা ও নেত্রীরা তৃণমূলের নামে কুৎসা রটাতে চাইছেন।’
এদিকে, শনিবার পঞ্চম দফার ভোট শেষ হওয়ার পরই বিভিন্ন জায়গা থেকে হিংসার ঘটনার খবর আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে নদিয়ার শিমুরালিতে। নিহত বিজেপি কর্মীর নাম দিলীপ কীর্তনীয়া। শনিবার ভোট শেষ হওয়ার পর রাত থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। রবিবার সকালে তাঁর নিজের বাড়ির কাছে একটি ফাঁকা জায়গায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। চাকদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মনে করা হচ্ছে, তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। ওই বিজেপি কর্মীর পরিবারের অভিযোগ, বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তৃণমূলের লোকজন ফোন করছিল। তারাই তাঁকে খুন করেছে বলে তাঁদের দাবি। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীদের ওপর তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা হামলা চালাচ্ছে বলে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।